জীবনের অনুপ্রেরণার গল্প
আজ গল্প বলবো মা ইউন এর। নামটা পরিচিত নয় তাই তো? জ্যাক মা নামটা কি পরিচিত মনে হচ্ছে? এখন নিশ্চয় কারো কারো চেনা, এবার আরো সহজ করে বলি, আজ গল্প বলবো আলিবাবা এর জন্মের, আলিবাবা ডট কম।এবার হয়ত এর এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যার কাছে এই নামটা অপরিচিত। হ্যা, জ্যাক মা হলেন আলিবাবা ডট কমের স্থপতি এবং চেয়ারম্যান।২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের হিসাব অনুযায়ী চীনের সবচেয়ে ধনী এই মানুষটি বিশ্বের সফল উদ্যোক্তাদের একজন।
মা চীনের হ্যাংঝু শহরে ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বার জন্মগ্রহন করেন। পেশাজীবী বাবা মায়ের মা ছিলেন ২য় সন্তান।তিনি ছোটবেলা থেকে ইংরেজি শেখার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি মনে করেন যে কারো সাথে ইংরেজিতে কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি আরো পারদর্শী হয়ে উঠবেন। শুরু করে দেন টুরিস্ট গাইডের কাজ। এবং শুধু ইংরেজিতে পারদর্শী হওয়ার জন্য তিনি টানা ৯ বছর ৭০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে হ্যাংঝু ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে যেতেন টুরিষ্ট গাইডের কাজ করতে।বিদেশীরা তার নাম ঠিকমত উচ্চরন করতে পারত না যার কারনে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে জ্যাক রাখেন।
ইংরেজী শেখার জন্য যে সংগ্রাম জ্যাক চালিয়েছিলেন, একি সংগ্রাম তিনি চালান কলেজে ভর্তির জন্য। তিনি পড়ালেখায় তেমন ভাল ছিলেন না, অপরদিকে চীনে কলেজে ভর্তির পরীক্ষা বছরে মাত্র একবার অনুষ্ঠিত হয়, এই পরীক্ষা তিনি পর পর ৪ বছর দেয়ার পর পাশ করে ভর্তির সুযোগ পান এবং ১৯৯৮ সালে ইংরেজি সাহিত্যে হ্যাংঝু নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনার ইতি টানেন।
এবার মা এর শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন, পেশাগত জীবনে দাড়াতেও তাকে অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হতে হয়। একের পর এক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বাতিল হতে থাকেন, তিনি পুলিশে জোগদানের চেষ্টা করেন, সেখানেও তাকে অযোগ্য বলে ফেরত পাঠানো হয়।এমনকি কে এফ সি এর প্রথম আউট লেট চীনে যখন চালু হয় তখন জ্যাক মা সহ মোট ২৪ জন সেখানে চাকুরির আবেদন করেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনই সেখানে নির্বাচিত হয়, আর বাকি পড়ে যান মা। এবার মা অনেক বেশি হতাস হয়ে পড়েন, অবশেষে ইংরেজী বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান থাকার করনে তিনি হ্যাংঝু ডায়ানজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ও আন্তর্জাতিক বানিজ্যের লেকচারার হিসেবে নিয়োগ লাভের সুযোগ পান। মা যখন হ্যাংঝু নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন সে সময় স্ত্রী ঝং হিং এর সাথে পরিচয় হয়, তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এই দম্পতির একজন ছেলে ও একজন মেয়ে রয়েছে। ।।শিক্ষা মুলক গল্প।।
১৯৯৪ সালে মা প্রথম ইন্টেরনেট সম্পর্কে জানতে পারেন। ১৯৯৫ সালে কিছু কাজে তিনি প্রথমবারের মত ইউ এস এ তে যান এবং বন্ধুদের সহায়তায় ইন্টারনেট প্রথম ব্যাবহার করেন। তিনি বলেন যে প্রথম তিনি “বিয়ার” শব্দটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। অদ্ভুত হলেও সত্য যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের “বিয়ার” সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের তথ্য পেলেও চীনের কোন তথ্যই তিনি পেলেন না। পরীক্ষামুলক ভাবে চীন সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন কিন্তু সেখানে চীন সম্পর্কিত কিছুই পেলেন না।এখানেই তার মাথায় নতুন চিন্তার উদয় হয়। এই চিন্তা থেকেই মা তার বন্ধুর সাথে জুক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি পেজ তৈরি করেন, কিন্তু সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত না থাকায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়না ফলে ধীরে ধীরে এই ব্যবসাটিও ব্যর্থ হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ- একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প
১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মা সরকারি চাকুরি করেন এবং এই বছরই পদত্যাগ করে হ্যাংঝু শহরে ফিরে যান। এখান থেকেই তিনি তার ১৮ জন বন্ধুর সাথে ইন্টারনেট ভিত্তিক আরো একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন আর সেটাই হল আলিবাবা ডট কম। এটি দাড় করাতেও তাকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। তাকে ভীষন রকম সাহায্য করে ইয়াহু এর সহ প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং।
পরবর্তীতে সফট ব্যাঙ্কের একটি বিশাল বিনিয়োগ আলিবাবার গতি ফিরিয়ে দেয়। এরপর আলিবাবাকে নিয়ে মায়ের সংগ্রামের ইতি ঘটে। ৪ বছরের মধ্যে আলিবাবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং অয়েবসাইট হয়ে যায়। বর্তমানে ফেসবুকের চেয়েও আলিবাবা ডট কমের নেটওয়ার্ক বড় মা আলিবাবা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। আলিবাবা এখন একটি হোল্ডিং কোম্পানি যার ৯টি প্রধান সহায়ক সংগঠন রয়েছে। বর্তমানে ইবে এবং আমাজনের চেয়েও আলিবাবা ডট কমের আয় বেশি।
প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছে, ব্যর্থতায় সফলতার চাবিকাঠি। জ্যাক মা এর জীবনে এই কথাটা জেন ভীষন রকম সত্যি। তার জীবন শত শত তরুনের অনুপ্রেরনার যোগানদাতা।।অনুপ্রেরনার সেরা গল্প
Post a Comment